রক্ত স্বল্পতা কি? রক্ত স্বল্পতার কারণ ও প্রতিকার
রক্ত স্বল্পতা কি? রক্ত স্বল্পতার কারণ ও প্রতিকার
আজকে আমি আপনাদের সাথে যে বিষয় টি নিয়ে আলোচনা করবো, তা হলো কিভাবে আপনার রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারেন অথবা কী খেলে আপনার রক্ত স্বল্পতা দূর হবে?
রক্ত স্বল্পতা কি?
রক্ত স্বল্পতা হল, যদি কারও রক্তের লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিন অনেক বেশি কমে যায়। সাধারণভাবে এটাকে আমরা রক্তস্বল্পতা বলি। এবং এই হিমোগ্লোবিন যদি স্বাভাবিক ভাবে আমরা ১২ গ্রাম পার্টিসিল্যাটারের উপরে পেয়ে থাকি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আমরা বলে থাকি যে, তাঁর হিমোগ্লোবিন ভালো আছে বা রক্ত স্বল্পতা নেই। কিন্তু 12 গ্রামের চেয়ে যদি কম থাকে সে ক্ষেত্রে আমরা বলি যে তাঁর রক্ত স্বল্পতা রয়েছে।
রক্ত স্বল্পতা থাকলে কি কি সমস্যা হতে পারে?
রক্ত স্বল্পতা থাকলে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন, হার্টের সমস্যা হতে পারে, ব্রেইনে সমস্যা হতে পারে, কিডনি ও লিভার সমস্যা হতে পারে, সকল মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং রক্তস্বল্পতা থেকে এক পর্যায়ে হার্ট ফেলিওর হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
রক্ত স্বল্পতার লক্ষ্যন কি?
সারাক্ষণ দুর্বল অনুভব করবেন। শ্বাসকষ্ট হবে, বুক ধরপর করবে, বুকে ব্যথা হবে, মাথা ঝিমঝিম করবে। সুতরাং আপনাকে সুস্থ থাকতে হলে রক্ত স্বল্পতা দূর করতে হবে।
রক্ত স্বল্পতার কারণ ও প্রতিকার।
আমাদের রক্ত স্বল্পতা কমে যাওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে। তার মধ্যে একটি কারণ হল নিউট্রিশনাল। অর্থাৎ নিউট্রিশনাল হল ডায়েটের ডেফিসিয়েন্সির কারণে হয়ে থাকে। এই ডেফিসিয়েন্সি মূলত আয়রন ডেফিসিয়েন্সি হয়, ফলিক অ্যাসিড ডেফিসিয়েন্সি হয়, অথবা ভিটামিন বি ১২ ডেফিসিয়েন্সি হয়। এই তিনটি কারণে রক্তস্বল্পতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।তাছাড়া রক্তস্বল্পতার আরো কিছু কারণ আছে ৷ কিছু কিছু রোগ আছে যেমন, কারও কিডনিতে সমস্যা থাকলে সেখান থেকে রক্ত স্বল্পতা তৈরী হয়। সেক্ষেত্রে কিডনি রোগের চিকিৎসা করলে রক্তস্বল্পতা দুর হবে। থ্যালাসেমিয়া, থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মগত রোগ। এই রোগ থাকলে রক্ত স্বল্পতা হয়। থ্যালাসেমিয়ার কারণে কিন্তু কয়েক মাস পর পর রক্ত দিতে হতে পারে ৷ আরো অনেক রোগ আছে। যার কারণে রক্ত স্বল্পতা হতে পারে।
তাই ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করে, চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা দুর করতে হবে।
রক্ত স্বল্পতার প্রতিকার।
আমি প্রথমেই বলেছি, অধিকাংশ মানুষের কিন্তু রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়,নিউট্রিশনাল ডেফিশিয়েন্সির কারণে। এটা মূলত আয়রনের ঘাটতি, ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি, এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি। তাহলে আপনি এই তিনটি উপাদান যদি পর্যাপ্ত খান। তাহলে আপনার রক্তস্বল্পতা আবার পূরণ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে দুটো জিনিস জানতে হবে। প্রথমটা হল, কোন কোন খাবারে এই উপাদান গুলো আছে এবং সেগুলো আসলে কিভাবে খেলে আপনার রক্ত স্বল্পতা দূর হবে। দুই এই তিনটি উপাদানের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি কমন হল, আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া৷ কারণ আয়রনের অভাবে আমাদের শরীরে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। আয়রন অনেক খাবারে পাওয়া যায়। সেই খাবারগুলো আপনি খেলে এই ঘাটতি পূরণ হবে।
রক্ত স্বল্পতার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার।
যেমন কচু শাক, কাঁচ কলা, সবুজ শাক_ সবজি, ফল_মূল, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগী মাংস, এবং গরু, খাসি, মুরগী এদের যে অর্গ্যান, যেমন গিলা কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আরেকটি কথা হল যে যাদের আবার কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে বা হার্টের সমস্যা আছে, তাঁরা তো রেড মিট জাতীয় খাবার, যেমন গরু এবং খাসির মাংস খেতে পারবেন না। তাঁদের জন্য আয়রন এর ঘাটতি পূরণ করার উপায় হলো, আপনারা সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। সামুদ্রিক মাছে কিন্তু আপনার কোলেস্টেরল নেই৷ এবং হার্টের জন্য খুবই ভাল। তাই আপনি সেখান থেকে আয়রন পেয়ে যাবেন। এখানে একটি বিশেষ টিপস আপনাদের বলে রাখি, আপনি যখন এই বিশেষ খাবারগুলো খাবেন, তার সাথে ভিটামিন সি খুবই প্রয়োজন।
সুতরাং আপনি যখন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে আপনার আয়রন ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতা পূরণের উদ্দেশ্য থাকবে। তখন কিন্তু সেই খাবারের সাথে আপনাকে লেবু রাখতে হবে। আপনি যদি খাবারের সাথে লেবু রাখেন তাহলে আপনি অনেক দ্রুত আয়রন ঘাটতি বা রক্ত স্বল্পতা দূর করতে পারবেন। আরেকটা ব্যাপার হল এই খাবারগুলো খাওয়ার পরে যদি আপনি চা খান তাহলে কিন্তু আপনার আয়রনের ঘাটতি পূরণ হবে না। কেননা, অনেকেরই কিন্তু একটি অভ্যাস আছে যে, লাঞ্চের পরে বা খাবারের পর একটু চা খাওয়া। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যাপারটা যদি এরকম হয় যে, আপনার আয়রন ঘাটতি আছে এবং আপনি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছেন। তাহলে আপনার খাবারের পরে অবশ্যই চা পরিহার করতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশের মানুষ মোটামুটি শাকসবজি সবাই খেয়ে থাকে। সুতরাং এই ফলিক অ্যাসিডের অভাব খুব বেশি দেখা যায় না। কিন্ত শুধুমাত্র গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে ফলিক অ্যাসিডের চাহিদা বেশি থাকে। সে জন্য গর্ভাবস্থায় অনেকেই এক্সট্রা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হয়। যাতে তাঁদের এই ঘাটতিটা তৈরি না হয়। এছাড়া আমি আবারো বলে দিচ্ছি খাবারে আপনার ছয়টি উপাদান থাকতে হবে। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা প্রোটিন বা আমিষ এবং ফ্যাট বা চর্বি। সাথে ভিটামিন এবং মিনারেলস। আর যারা ডায়েটে আছেন তাদের ক্ষেত্রে সবুজ শাক_সবজি, ফল এবং সামুদ্রিক মাছ,ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা পূরণ করতে পারেন। এটা যদি আপনি একটু মেন্টেন করেন আপনি আর কয়েক মাসের ভিতরেই আপনার যে রক্ত স্বল্পতা বা আয়রন ঘাটতি রয়েছে এগুলো আপনি পূরণ করতে পারবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url