ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য কোলাজেনের গুরুত্ব
ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য কোলাজেনের গুরুত্ব।
কী এই কোলাজেন? কোলাজেন এর ঘাটতি হলে কী হবে? এবং কী করলে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে?
কোলাজেন কি?
কোলাজেন মূলত আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোটিন। এটা আমাদের শরীরে হাড় জয়েন্ট এবং তন্তুতে পাওয়া যায়। এটা মূলত আমাদের শরীরে যে সেল গুলো থাকে, এগুলোকে একসাথে আঠার মতো করে আটকে রাখতে সাহায্য করে। এ কারণে আমাদের শরীরে উপরিভাগে চামড়া টান দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পরে, সেটা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে।
অর্থাৎ এই কোলাজেনের কারণে আমাদের ত্বকে স্ট্রেচ এবং সঙ্কুচিত হওয়ার ক্ষমতা থাকে। আমরা হাসতে পারি, আমরা দৌড়াতে পারি, নাড়াচাড়া করতে পারি। এই কোলাজেন এর আধিক্যের কারণে শিশুদের ও টিনেজারদের ত্বক টানটানে ও ফার্ম থাকে। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কোলাজেনের ঘাটতি দেখা দেয়ায়, ত্বকে ইলাস্টিসিটি হারাতে থাকে। তাই ত্বক ঝুলে পড়তে শুরু করে। ত্বকে ভাঁজ বা বলিরেখা দেখা দেয়। এছাড়াও যদি ত্বকে কোনও বিশেষ অংশে কোলাজেন লস হয়, তাহলে সেই অংশ বা ত্বক কিন্তু ভিতরে দেবে যায়, এবং সেটাকে আমরা গর্ত হিসেবে দেখতে পাই। তাহলে বুঝতে পারছেন তো যে, ত্বকের এবং শারীরিক ভাবে তারুণ্য ধরে রাখতে কোলাজেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
কোলাজেনের ঘাটতি কেন হয়?
সব থেকে বড় কারণ বয়স, শিশু বয়সে আমাদের শরীরে কোলাজেনের পরিমাণ সর্বোচ্চ থাকে। এরপর ধীরে ধীরে কোলাজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। প্রতি বছর গড়ে ১% কোলাজেন আমাদের শরীর থেকে কমতে থাকে। এই প্রসেস পুরোপুরি থামিয়ে দেওয়ার কোনও উপায় নেই। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, বয়সের তুলনায় কোলাজেন ঘাটতির পরিমাণ বেশি হয়। যেটা রোধ করা সম্ভব। সেই সাথে আমাদের শরীর যেন নতুন করে কোলাজেন উৎপন্ন করতে পারে সেজন্য কিছু স্টেপ নেওয়া যেতে পারে। সূর্য থেকে নির্গত ইউ. ভ. রে, শরীরে কোলাজেন ভেঙে যাওয়ার দ্বিতীয় বড়ো কারণ। আমাদের খাদ্যাভ্যাস, আমাদের লাইফস্টাইলও কিন্তু আমাদের ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার পিছনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। স্মোকিং করা, ড্রিঙ্কিং করা, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া। এ সবই কিন্তু কোলাজেন ভেঙে দেওয়ার পিছনে ভূমিকা পালন করে।
কী করলে আমাদের শরীরের নতুন কোলাজেন উৎপন্ন হবে? এবং ভেঙে যাওয়ার হারও একটু কমে যাবে?
(১)অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রোডাক্ট ব্যবহার। বায়ু, পানি, শব্দ দূষণ আমাদের শরীরের সাথে সাথে আমাদের ত্বকের উপরেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। পরিবেশ দূষণের ফলে আমাদের ত্বকের ফ্রিওরেডিকেল ড্যামেজ হয়, যার ফলে আমাদের ত্বকের কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ভাগ্যবশত সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত পরিবেশ তো আমাদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ফ্রিওরেডিক্যাল ড্যামেজ প্রভাব যেন অন্তত কিছুটা কমিয়ে আনতে পারা যায়, সেজন্য আমাদের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রোডাক্ট কিভাবে চিনবেন? খুবই সহজ, আপনার প্রোডাক্ট এ এই উপাদানগুলো আছে কিনা, চেক করে দেখুন। যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, নিয়াসিনামাইড, রেটিনল, এই উপাদানগুলো সেরা ফর্মে সবথেকে বেশি কার্যকর মনে করি। তবে আপনারা চাইলে এটা অন্য ফর্মে, যেমন মশ্চারাইজার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
(২) কোলাজেন উৎপাদনে সক্ষম, এরকম প্রোডাক্ট ব্যবহার করা। আজকাল বাজারে আপনারা অনেক কোলাজেন পোস্টক্রিম দেখতে পাবেন। কিন্তু তাতে যদি ভিটামিন সি, রেটিনল, এই দুটি উপাদানের কোনোটি না থাকে, তাহলে সেই প্রোডাক্ট থেকে আপনার কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা জিরো। যে কোন ভালো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন।
(৩) লাইফস্টাইল, কোলাজেন উৎপাদনের জন্য ব্যস্ত হয়ে কোনও লাভ নেই, যদি প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরে থাকা কোলাজেন কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকি। ঘুমের অভাবে দিনের পর দিন রাত জেগে থাকা, আমাদের শরীরগুলিতে কোলাজেন কমিয়ে ফেলতে পারে। যদি আপনার শরীরে তারুণ্য ধরে রাখতে চান, তাহলে যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমানোর এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কোলাজেন যুক্ত অন্তত একটি খাবার যেমন মাছ, মুরগির মাংস বা ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখুন। সার্বিক ভাবে একটি সুষম ডায়েট, কোলাজেন রাশ রোধে ভূমিকা রাখে।
(৫) অতিরিক্ত চিনি পরিহার করা, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, আমাদের শরীরের কোলাজেন কে ব্রেকডাউন করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয়,গ্লাইকেএশন। এর মানে এই নয় যে, আপনি একেবারে মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারবেন না। জাস্ট যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খায়, তাঁদের একটু সতর্ক হতে হবে।
(৬) স্মোকিং এবং ড্রিঙ্কিং পরিহার করা, আপনি ছেলে হন বা মেয়ে হোন, যদি আপনি আপনার ত্বকের বা শরীরের তারুণ্য ধরে রাখতে চান, তাহলে এই মুহূর্ত থেকে স্মোকিং এবং ড্রিঙ্কিং বন্ধ করুন। আপনি শরীর ধ্বংস করে, ত্বক বাঁচাতে পারবেন না।
(৭) সান প্রোটেকশন, আমি কিন্তু শুরুতেই ব্যাখ্যা করেছি ইউ.ভি.রে, বয়সের সাথে সাথে আমাদের ত্বকের কোলাজেনের ঘাটতির পিছনে সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করে। এবং যেকোন সমস্যার ক্ষেত্রে "প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কেয়ার"। কিন্তু সান প্রোটেকশন মানে, শুধুমাত্র সানস্ক্রিন ব্যবহার নয়। যদি আপনার সানস্ক্রিন কেনার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে আপনি স্কার্ফ, সানগ্লাস, ছাতা বা মাস্ক ব্যাবহারের মাধ্যমে অনেকটাই প্রোটেকশন নিতে পারেন। অথবা রোদে যাওয়া এরিয়ে চলতে পারেন। এগুলো কোনওটাই কিন্তু বিফলে যাবে না। সানস্ক্রিনের ব্যবহার আপনার ত্বকের কোলাজেনের অকাল মৃত্যু রোধ করবে।
(৮) হরমনাল থেরাপি, শরীরে বড় কোনও হরমোনের পরিবর্তন। যেমন প্রেগন্যান্সি বা মেনোপজের পরে, কোলাজেনের ঘাটতি বেড়ে যেতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার ডার্মিকলজিস্টি এর পরামর্শে হরমোনাল থেরাপি বা ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।
(৯) প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট, মাইক্রোনিডলিং লেজার সহ এখন অনেক ধরনের প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট রয়েছে যেগুলি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে। তবে কখনো এ ধরনের ট্রিটমেন্ট ঘরে বসে করার চেষ্টা করবেন না। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। বরং আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী কোন ট্রিটমেন্টে টা আপনার জন্য মানানসই হবে, সেটা কোনো নির্ভরযোগ্য ডার্মিকলজিস্ট এর সাথে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিন।
(১০) সবশেষে এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি টিপস হল, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন। আমাদের কারো জীবন স্ট্রেস ফ্রী না, এটা সম্ভব না৷ তবে মাঝে মাঝে আসলে স্ট্রেসের পরিমাণটা অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। পড়াশোনার চাপ, বাবা মায়ের প্রত্যাশার চাপ, পার্টনারের সাথে বোঝাপড়ার অভাব, নতুন সন্তান লালন পালনের স্ট্রেস, বিভিন্ন কারণে ধরনের স্ট্রেস দেখা দিতে পারে। স্ট্রেস কিন্তু আমাদের ত্বকের জন্য এক্সট্রিমলি ক্ষতিকর। এটা ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার সকল প্রচেষ্টাকে একদম ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত স্ট্রেসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন থাকা। স্ট্রেস কমাতে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া।
ধন্যবাদ সবাইকে।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url