ঘুমের মধ্যে কেন বোবা ধরে
ঘুমের মধ্যে কেন বোবা ধরে
ঘুমের মধ্যে আপনার হঠাৎ মনে হবে আপনার বুকের উপর কেউ বসে আছে। আপনাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। আপনি তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনওভাবে আপনি আপনার হাত পা নাড়াতে পারছেন না।
শুধু এই কষ্টটা অনুভব করছেন, এই ব্যাপারটাকে আমাদের দেশে বলা হয় বোবা ধরা এটাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালিসিস।
এই ভয় ধরার ঘটনা কেন ঘটে কাদের বেশি ঘটে এবং সেটার সমাধান কি?
এইটা বুঝানোর জন্য আমি আপনাদের কে একটা ঘটনা বলি। আমি তখন ব্যাচেলর স্টুডেন্ট তখন আমি আমার এক বন্ধুর সাথে ঘুরতে যাই। তখন আবার, আমার ভূতের ভয় ছিল। আমি যেখানে সেখানে ভূতের ভয় পেতাম তো যেহেতু বাড়িতে যেতে হবে তারমানে রাতে আমাকে একা ঘুমাতে হবে তো সন্ধ্যার পর থেকে আমার মনের মধ্যেই আতঙ্ক ছিল যে আজকে আমাকে একা ঘুমাতে হবে, মানে একটু ভয় পাচ্ছিলাম।
আমি যখন রাতে ঘুমালাম ঘুমানোর কিছুক্ষণ পরেই আমার এরকম একটা অনুভূতি হল যে কয়েকজন আমার বুকের উপর বসে আছে, আমার গলা চেপে ধরে আছে, আমাকে মেরে ফেলবে তো আমি খুব চেষ্টা করছি আমি হাত দিয়ে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো, বা কোনও ভাবে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করব। কিন্তু আমি আমার হাত পা শরীর কোনও কিছুই নাড়াতে পারছি না। তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো বা তাকে ফাইট ব্যাক করবো আমি শুধু সাফার করছি তো এটা প্রায় বেশ কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত চলে।
এরপর আমি বসতে সক্ষম হই তো এটা হচ্ছে বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস।
আর একটা হল দুঃস্বপ্ন, তবে দুঃস্বপ্ন আর স্লিপ প্যারালাইসিস কিন্তু পুরোপুরি এক জিনিস না। দুঃস্বপ্নের মধ্যে যা যা ঘটে তার পুরোটাই হচ্ছে স্বপ্নের মধ্যে।
আর স্লিপ প্যারালাইসিস বা বুবা, ধরার ক্ষেত্রটা হল, আপনি একটা জিনিস করতে চাচ্ছেন কিন্তু আপনি এটা করতে পারছেন না। এদিকে আপনার দম আটকে আসছে বা আপনি এটা সহ্য করতে পারছেন না। এ রকম ঘটনাই স্লিপ প্যারালাইসিস বা, বুবা, ধরার ঘটনা।
ঘুমের মধ্যে কেন বোবা ধরে
বোবা কেন ধরে আসলে আমরা যখন ঘুমাই আমরা কী করি রাতে ঘুমাই সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। কিন্তু আসলে আমরা এই পুরোটা সময়ের মধ্যে অনেকগুলো সাইকেল পূরণ করে।
সেটা হলো ঘুমের সাইকেল।
একটা সাইকেল 90 মিনিটের মতো প্রক্সিমিটি,তো প্রত্যেকটা সাইকেলে আবার আমরা দুই ধরনের ঘুমাই,
১ঃ রেইম স্লিপ মানে যার্পিড আই মুভমেন্ট।
২ঃ আরেকটা হচ্ছে নন রেম স্লিপ যেটাকে বলা হয় নন যার্পিড।
আই মুভমেন্ট যার্পিড কী?
অনেক সময় খেয়াল করে দেখবেন একজন মানুষ ঘুমিয়ে আছে আপনি যদি তাঁর চোখের দিকে তাকান দেখবেন তার চোখের মণি একটু নড়াচড়া করছে ওই মুহূর্তে আসলে উনি রেন স্লিপের মধ্যে আছেন তো প্রত্যেকটা সাইকেলের মধ্যে রেম যেটা,সেটা হচ্ছে চার ভাগের এক ভাগ আর নন হচ্ছে চার ভাগের তিন ভাগ তো নন রেম পার্ট যেটার মধ্যে মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে। এবং সারাদিন কাজকর্মের কারণে তাঁর শরীরের যা যা খরচ হয়েছে সেগুলো আবার রিস্টোর হয়।
আর রেইম যেটা, সেটাতে মানুষ স্বপ্ন দেখে তো তার মানে কী দাঁড়াচ্ছে?
প্রত্যেকটা সাইকেল আসলে বড়জোর 15 থেকে 20 মিনিটের মতো করে আপনার স্বপ্ন দেখার সময় যদি অনেক সময়ে ঘুম থেকে ওঠার পরে মনে হয় আমরা সারারাত স্বপ্ন দেখলাম, আসলে কিন্তু ব্যাপারটা তা না।
এ রকম প্রত্যেকটা সাইকেল শুরু হয় নন স্লিপ দিয়ে। তার পরে ওই সাইকেলের একটুখানি রেঞ্জ স্লিপ হয়। তারপরে আবার পরের সাইকেলে চলে যায়। এরকম করে সারারাত চলতে থাকে৷ আমরা যেহেতু রেইম স্লিপ এর সময়ই স্বপ্ন দেখি।
আমরা যখন স্বপ্ন দেখি ধরেন আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম যে আমি সৌদি আরব চলে গেছি সেখানে গিয়ে সাকিব আল হাসানের সাথে দেখা সে হচ্ছে তেল বিক্রি করছে।
সেখানে আবার সে তার ব্যাটটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর হাত থেকে ব্যাটটা নিয়ে চলে আসলাম নেদারল্যান্ডে। সেখানে এসে দেখা হল মেসির সাথে এরকম অনেক উল্টোপাল্টা ঘটনা ঘটে এ রকম হলে তো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি যদি দেখেন মারামারি করছেন আপনাকে একজন মারছে আপনি তাকে ফিরতেই আবার মারতে গেলেন। বাস্তবে দেখা গেল সে আপনার পাশে শুয়ে আছে।
তার গায়ে অথবা আপনি নিজেও নিজেকে আঘাত করতে পারেন তো এগুলো যেন করতে না পারেন তার জন্যই আমাদের শরীরের সিস্টেমটা এমন ভাবে তৈরি করা যেন আমরা স্বপ্ন দেখার সময় প্যারালাইজড অবস্থায় থাকি।
আপনি ধরেন একটা দুঃস্বপ্ন দেখছেন দুঃস্বপ্নের কারণে আতঙ্কে আপনার ব্রেন জেগেছে।
কিন্তু যেহেতু এটা রেঞ্জ স্লিপের টাইম আপনার বডি কিন্তু প্যারালাইসিস এখনও আছে। আপনার বডি এখনো জাগে নাই, কিন্তু আপনার ব্রেন জেগে আছে তো ব্রেন জেগেছে বিদায় ব্রেন আপনার শরীরকে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে যে নড়াচড়া করো বা আপনি দুঃস্বপ্ন দেখছেন আপনি দেখছেন কোন একটা ভূত এসে আপনার গলা চেপে ধরেছে তো সেটার বিরুদ্ধে রেসপন্স করার জন্য ব্রেন আপনার শরীরকে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে ওকে ঠেলা দিয়ে সরাও কিন্তু আপনার শরীরে ঘুমিয়ে আছে। কারণ এখনও সে রেন স্লিপ মোডে আছে ও তো প্যারালাইসড।
যার ফলে আপনি হাত পা শরীর কোনও কিছুই নাড়াতে পারছেন না।
অথচ ব্রেন থেকে অনুভব করছে যে আপনাকে কেউ একজন মেরে ফেলছে। একজন মেরে ফেলার সময় যে অনুভূতি হয় সেই অনুভূতি ঠিকই পাচ্ছেন। আবার ব্রেন দিয়ে সিগন্যাল দিচ্ছে যে তুমি একে সরাও বা তুমি হাত দিয়ে সরিয়ে দাও ওকে। ওইটা যেহেতু হচ্ছে না মানে পুরো ব্যাপারটা আরও খারাপ পরিস্থিতি হয়ে যায়। তবে আসলে খুব বেশি সময় থাকে না৷ কয়েক সেকেন্ড পরে আসলে মানুষটা পুরোপুরি জেগে ওঠেন।
তখন আপনি বুঝতে পারেন যে বোবা ধরেছিল বা স্লিপ প্যারালাইসিস হয়েছিল।
স্লিপ প্যারালাইসিস বা বড় ধরনের ঘটনা আসলে কাদের বেশি ঘটে বা কেন ঘটে?
বেশ কিছু কারণ আছে তার মধ্যে একটা বড়ো কারণ হচ্ছে জেনেটিক কারণ মানে আপনার বাবা, মা, অথবা পরিবারের অন্য কারও এই ঘটনা যদি কখনো ঘটে তাকে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আপনার যদি ঘুমের সমস্যা থেকে থাকে অনেকেরই আছে ঘুম অনেক পাতলা। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যায় অথবা তাঁদের ঘুমের টাইমটা রেগুলার না অথবা তারা দিনের বেলায় বেশি পরিমাণে ঘুমাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে আবার এই ঘটনা ঘটতে পারে। তিন নম্বর কারণ হচ্ছে কারও যদি মেন্টাল সমস্যা থেকে থাকে যেরকম হচ্ছে বাইপোলার ডিসঅর্ডার এরকম যদি থাকে তাহলে সেখান থেকে আপনি বড় ঘটনা ঘটতে পারে। তার একটা কারণ হচ্ছে আপনি যদি ডিপ্রেশনে থাকেন অথবা স্ট্রেসের মধ্যে থাকেন অথবা কোনও কারণে খুব বেশি চিন্তিত থাকেন সেক্ষেত্রেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই স্লিপ প্যারালিসিস ঘটতে পারে।
আর একটা কারণ হচ্ছে চিৎ হয়ে শোয়া। আপনি যদি এটাকে পরিহার করতে চান এটাকে তাহলে চিৎ হয়ে না শুয়ে কাৎ হয়ে ঘুমালে ভালো হয়। যাদের আসলে এটা ফ্রিকোয়েন্সি ঘটে যে প্রায় দু একদিন পর পর ঘটছে সে ক্ষেত্রে আপনারা কাত হয়ে শুয়ে দেখতে পারেন। তবে এটা সবার ক্ষেত্রে কাজ নাও করতে পারে। আর সর্বশেষ কারণ হচ্ছে মেডিসিন এর সাইড ইফেক্ট যে রকম কেউ যদি এই ড্রাগ নিয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনার ওই সাইড এফেক্ট হিসেবে আপনার এই স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে। অথবা কেউ যদি ড্রাগ অ্যাডিক্ট থাকেন সেই তার সাইড ইফেক্ট হিসেবেও এটা করতে পারে।
স্লিপ প্যারালাইসিস এর চিকিৎসা কী?
বেশিরভাগ মানুষেরই এই বই ধরার কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। যাদের জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে অথবা হঠাৎ একদিন হয়ে থাকে তাদের আসলে চিকিৎসার দরকার নেই। তবে যাদের ঘুমের কারণে হয়ে থাকে তাদের আসলেই ঘুমটা কে ভালো মতো মেন্টেন করতে হবে।
আর যাদের ড্রাগের কারণে সমস্যা হচ্ছে মানে অ্যাডিক্টেড যাঁরা যেমন প্রতিনিয়ত নেশাগ্রস্ত ৷ তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু বলার নেই তো আপনারা ওগুলো ছেড়ে দিলে আপনাদের এই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url