ঘুম না হওয়ার ১০ টি কারন ও চিকিৎসা
ঘুম না হওয়ার ১০ টি কারন ও চিকিৎসা
আমরা অনেকেই নিদ্রাহীনতায় ভুগে থাকি। সারাদিন মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। আজ আমি নিদ্রাহীনতার ১০টি কারণ ও তার চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করবো।
এই এসবগুলোই গবেষণা থেকে তুলে ধরা হলো। কোন চিকিৎসাটা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে সেটাও আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমাতে গেলে অনেকে নানা দুশ্চিন্তা মাথায় আসতে থাকে যার ফলে ঘুম আসে না।
অর্থাৎ এই দুশ্চিন্তাগুলো নিয়ে ভাবার জন্য দিনের বেলাতে একটা আলাদা সময় রাখা প্রয়োজন।
ঘুম না হওয়ার ১০ টি কারন ও চিকিৎসা
১
ধরেন আপনি ঠিক করলেন প্রতিদিন বিকাল ৫ টা থেকে ৫ঃ৩০ আপনার দুশ্চিন্তার সময় এই সময়ে আপনি আপনার দুশ্চিন্তাগুলো নিয়ে ভাববেন তাহলে এগুলো দিনেই সমাধান হয়ে যাবে। ঘুমাতে গেলে আপনাকে বিরক্ত করবে না। কিন্তু ঘুমানোর সময় যদি আবার নতুন দুশ্চিন্তা আসে, নিজেকে বলবেন এটা আগামীকালের জন্য। এখন এটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই।
২
কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে যেমন, চা কফি, কোমল পানীয় আর এনার্জি ড্রিঙ্কস। কারণ কী? কারণ এগুলোতে আছে ক্যাফিন। ক্যাফিন কী করে ঘুম আসতে দেয় না ঘুম আসলেও গভীর হতে দেয় না। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে বিশেষ করে এগুলো খাওয়া যাবে না।
৩
ঘুমের কাছাকাছি সময়ে গরম দুধ পান করতে পারেন। কারণ দুধে আছে ট্রিপটোফ্যান। গবেষণায় দেখা গেছে, এটা ভাল এবং লম্বা সময় ধরে ঘুমাতে সাহায্য করে।
৪
নিদ্রাহীনতা রোগীদের চিকিৎসায় আরেকটা পদ্ধতি শেখানো হয় যেটা আপনার উপকারে আসতে পারে তা হল ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক ঘণ্টার রিল্যাক্স করা এটাকে বলে ওয়াইন ডাউনটাইম দিনের ব্যস্ততা আর দুশ্চিন্তাগুলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনতে এই সময়টা ব্যবহার করতে বলা হয়। এই এক ঘণ্টায় যে সব কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয় সেগুলো হল। বই পড়া ডায়েরি লেখা, মনে প্রশান্তি আনে এমন শ্রুতিমধুর কিছু সোনা। যেমন ধর্মগ্রন্থ বা কবিতা, আবৃত্তি, গান যেটা আপনার জন্য কার্যকর হয়। আর যেসব কাজ করতে মানা করা হয় সেগুলো হল ঘুমানোর আগে টিভি দেখা, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা। কারণ এই যন্ত্রগুলোর স্ক্রিনে উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়
৫
যাদের বিছানায় শুয়ে থাকার পরও ঘুম না আসার সমস্যা আছে তাদের জন্য স্টিমুলাস কন্ট্রোল নামক একট চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হয়। যার উদ্দেশ্য হল আপনার মস্তিষ্ক যাতে শোবার ঘর এবং বিছানা দেখলে ঘুমের কথা চিন্তা করে শোবার ঘরের সাথে যাতে অনিদ্রার কথা মাথায় না আসে এই চিকিৎসা বেশ কয়েকটি নির্দেশনা আছে তার মধ্যে ১ টা, হল ঘুম না আসলে জোর করে বিছানায় শুয়ে না থাকা। যদি 10-20 মিনিটসময় ধরে শুয়ে থেকে ঘুম না আসে তাহলে বিছানা থেকে উঠে পাশের রুমে যাবেন রিল্যাক্স লাগে এমন কিছু কাজ করবেন যতক্ষণ ঘুম না আসে তারপর ঘুম আসলেই কেবল বিছানায় ফেরত যাবেন। পাশের রুমে কী কী করতে পারেন হাল্কা আলোতে বই পড়তে পারেন গান শুনতে পারেন। তবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। কারণ ফোনের উজ্জ্বল আলো ঘুম আসতে বাধা দিতে পারে।
৬
স্টিমুলাস কন্ট্রোল চিকিৎসা পরামর্শে আরেকটি নির্দেশনা হল বিছানা শুধু ঘুমের জন্য ব্যবহার করা বিছানায় অন্য কাজ না করা। আমরা অনেকেই বিছানায় খাবার খাই৷ পড়াশোনা করি মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করি। বাসায় থাকলে দিনের অনেকটা সময় বিছানায় কাটাই ঘুমের সমস্যা কমাতে চাইলে এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
৭
গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকের মনে ঘুম নিয়ে এমন কিছু ধারণা থাকে যা দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে এবং ভালো ঘুম হতে ব্যাঘাত ঘটায় কি সেই চিন্তাগুলো যেমন প্রতিদিন আমাকে ৮ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে, যখন ৮ ঘণ্টা ঘুমানো আপনার জন্য সম্ভব নয় আবার ঘুমাতে গেছেন ঘুম আসছে না। এর মধ্যে দুশ্চিন্তা শুরু করলেন আজ রাতে ভালো ঘুম না হলে কালকে কাজে খারাপ করব বা পরীক্ষায় ফেল করব। আবার মাঝরাতে চিন্তা শুরু করলেন যে নিদ্রাহীনতা কোনওদিনও সারে না। আমার এটা সারা জীবন থাকবে।
আপনার মাথায় যদি এমন চিন্তা আসে তাহলে সেটাকে দুরে ফেলেদিবেন। আর ঠাণ্ডা মাথায় নিজেকে বোঝাবেন এই চিন্তাগুলো কোনও ভিত্তি আছে কি না।৮
ঘুমানোর আগে অনেক বেশি করে খাবার খেলে কারও কারও ঘুম ভাল নাও হতে পারে যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে তাদের জন্য ঘুমানো তিন থেকে ৪ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৯
ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ নিকোটিন একটি উত্তেজক পদার্থ যাঁরা ধূমপান করে তাঁরা সহজে ঘুমাতে পারে না। ঘন ঘন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে এবং প্রায়ই তাদের ঘুম ব্যাহত হয়। একদম সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা সম্ভব না হলে অন্তত ঘুমনোর ১ ঘণ্টা আগে ধূমপান থেকে বিরত থাকবেন।
১০
নিদ্রাহীনতার চিকিৎসায় দিনের বেলায় ঘুমাতে নিরুৎসাহিত করা হয়। আর দিনের বেলা যদি ঘুমাতে হয় তাহলে দুপুরের আগে ঘুমিয়ে নেবেন। তা ও 40 মিনিটের বেশি নয়৷ এখন বলছি কোন সমাধানটা আপনার জন্য প্রযোজ্য?
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন নিদ্রাহীনতা অন্যান্য রোগ থেকে একটু ভিন্ন যেমন টাইফয়েড বা ভাইরাস জনিত কোন রোগ হলে আমরা নিশ্চিত জানি যে, আপনার শরীরে একটা জীবাণু প্রবেশ করেছে। নিদ্রাহীনতার ক্ষেত্রে তেমন নিশ্চিত একটা কারণ নাও থাকতে পারে। একেক জনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমি যে ১২ টি কারণ ও তার চিকিৎসা বলেছি তার সবগুলো আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে না। যেটা যেটা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুধু সেটাই আপনি পালন করবেন।
যদি এসব ব্যবস্থা নিয়েও ঘুমের সমস্যার সমাধান না হয়। ঘুমের অভাব নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় আপনার দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয় ঘুম নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা হতে থাকে। তবে ডাক্তারের সহায়তা নিবেন নিজে নিজে ঘুমের ওষুধ খাবেন না।
বিভিন্ন রোগ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের উপায় নিয়ে নিয়মিত আর্টিক্যাল প্রকাশ করছি। সবগুলো আর্টিক্যাল অনেক যত্ন করে লেখা যাতে করে সহজেই বোঝা যায়।
আগামীতে কোন রোগের বিষয়ে পরামর্শ জানতে চান? তা আমাদেরকে জানাতে কমেন্ট করুন।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url