নতুন নিয়মে সাত রকমের জমি খাস করা হবে

নতুন নিয়মে সাত রকমের জমি খাস করা হবে,৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমি থাকলে সরকার নিয় যাবে,যে সকল ক্যাটাগরির জমি খাস করা হবে

 নতুন নিয়মে সাত রকমের  জমি খাস করা হবে

নতুন নিয়মে সাত রকমের জমি আপনাদের কাছ থেকে খাস করা হবে।

৬০ বিঘার অতিরিক্ত  জমি থাকলে সরকার নিয় যাবে


এই যে ভূমি সম্পর্কিত তিনটি আইন ভূমি অপরাধ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার, হাট বাজার স্থাপন এবং আরও একটি আইন পাস হয়েছে। এই আইনের ফলে সাত ক্যাটাগরির জমি কিছু মালিকের কাছ থেকে বের করে নেওয়া হবে। অতএব এই ধরনের জমি যাঁদের কাছে আছে তাঁরা সাবধান। তাঁদের কে জমি ছেড়ে দিতে হবে। 


যে সকল ক্যাটাগরির জমি খাস করা হবে ? 


(১) কৃত্রিম মালিকানায় সৃষ্টি কোনও জমি হয়ে থাকলে। কৃত্রিম মালিকানা সৃষ্টি টা কি ? প্রকৃত মালিকের অনুপস্থিতে আর একজন বাটপার প্রতারক বিভিন্ন ভাবে জমির মালিক হয়েছে। 

কী ভাবে হতে পারে ? ধরেন এক ভাই বিদেশ চলে গেছে, বা এক বোন লন্ডন চলে গেছে, বাকি ভাই বোনেরা তার জমি দখল করে ফেলেছে। আবার দেখা যায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক হিন্দু বিদেশে চলে গেছে, ভারতে চলে গেছে, তাদের জমি তাদের প্রতিবেশী বা মুসলমানরা কোনও না কোনও ভাবে কাগজপত্র তৈরি করে দখল করে ফেলেছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে ধরণের ওয়ারিশরা বাইরে চলে গেছে, ২০ বছর ৩০ বছর হয়ে গেছে, আপনারা চিন্তা করছেন ভাই তো আমার জায়গা নতুন মার্কেট করে ফেলেছে, সে ব্যবসা করে ফেলেছে, বাড়ি করে ফেলছে, তিন বার বিক্রি করে ফেলেছে, আমি কি জমি পাব? অবশ্যই আপনার জমি পাবেন, আপনাদের জমি সামনের রেকর্ডেই  ডিসি অফিস কতৃক খাস করা হবে। তাঁরা যদি প্রকৃত কাগজপত্র দেখাতে না পারে তাহলে জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হবে। এখন যা আইনটা পাস হয়েছে তার সারমর্ম হচ্ছে, দলিল যার জমি তার। গতবছর মালিকানা সে পেয়েছে কয়েকটা রেকর্ড তাঁর নাম হয়েছে। এগুলো কিছুই যায় আসে না।


 অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হবে


(২) অবৈধভাবে বালু উত্তোলন যেমন আপনি নিজে কোনও জমি থেকে বালু উত্তোলন করছেন। অথবা কারো কাছে ভাড়া দিয়েছেন, সেখানে বালু উত্তোলন করছে। এটা কিন্তু ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে খুবই মারাত্মক ও চূড়ান্ত রকমের অপরাধ। একটা জমিতে যখন বালু উত্তোলন করা হয়, তাঁর আশেপাশের সমস্ত জমি বাড়ি ঘর হুমকির মুখে পড়ে। এগুলো নীচের দিকে দেবে যায় এবং ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়ে। এটা খুবই ভয়ঙ্কর রকমের অপরাধ। এ ধরনের কাজ করলে সরাসরি বলে দেওয়া হয়েছে। যেগুলো সরঞ্জাম দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেগুলো তো নিয়ে যাবেই এবং জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হবে। তার সাথে সাথে আপনার সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। 


অনুমোদন  বিহীন বাজার স্থাপন করলে  জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হবে


(৩) অনুমোদন বিহীন বাজার স্থাপন করেছেন অনেকে এলাকার মধ্যে। নিজের মনে করে বাড়ির আশপাশে ছোটখাট বাজার স্থাপন করেন। সলিম বাজার, কলিম বাজার, মালাইকা বাজার, এমপির বাজার, ইত্যাদি। এসব নাম দিয়ে ৪—৫  জমি মিলে একটা বাজার দিচ্ছেন। সেখানে একটা চা স্টল দিচ্ছেন, একটা মেডিসিন এর দোকান দিচ্ছেন, একটা খাবারের স্টল দিয়েছেন, ইত্যাদি দিয়ে অনুমোদন ছাড়া বাজার স্থাপন করেছেন। তাদের হাটবাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এবং আপনাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বাজার স্থাপনের একটি সঠিক নিয়ম আছে না জেনে সেটা করা যাবে না। ২০২৪ সাল থেকে ডিসি এবং এসিলেন সাহেবের অনুমোদন ছাড়া কোনও বাজার স্থাপন এবং কোন নাম প্রতিস্থাপন কিছুই করা যাবে না। 


জমির  খাজনা বাকি রাখলে জমি খাস হয়ে যাবে


(৪) তিন বছরের অধিক সময় ধরে খাজনা বাকি রাখলে। আপনারা অনেকেই দেশে বিদেশে আছেন। নিজের নামে জমি খারিজ করা নাই। আপনার বাবা মারা গেছে অনেক বছর আগে, তাঁর নামে এনআইডি কার্ড নেই। আপনি কারও নামে খাজনা দিচ্ছেন না। এগুলোকে বলে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স। ট্যাক্স না দিলে কিন্তু আপনার অনেক সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে  আপনাকে ওই জমি খারিজ করে নিতে হবে। খারিজ না করলে জমির মালিকানা কিন্তু আপনার থাকবে না। তাঁরা যদি প্রকৃত কাগজপত্র দেখাতে না পারে তাহলে জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হবে।


৬০ বিঘার অতিরিক্ত  জমি থাকলে সরকার নিয় যাবে


(৫) আপনার ৬০ বিঘার অতিরিক্ত কোনো জমি থাকলে। একই খানার ভিতর বাবা মা, ভাই বোন, স্বামী স্ত্রী সবাই মিলে যদি ৬০ বিঘার বেশি সম্পত্তি হয়ে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত সম্পত্তি কিন্তু সরকার নিয়ে নেবে। এখানে বলতে পারেন যে, আমিতো ৬০ বিঘা জমি কিনি নাই, আমি কিনেছি ২০ বিঘা আর বাকিগুলো বাবার কাছ থেকে পেয়েছি, নানার কাছ থেকে পেয়েছি, শ্বশুরের কাছ থেকে পেয়েছি, আপনি যে কোনও ভাবেই পান না কেন ৬০ বিঘার অতিরিক্ত কৃষিজমি হওয়া যাবে না। আপনাকে হয় এটা কোনও বাণিজ্যে বিক্রি করে দিতে হবে, অথবা বাণিজ্যিক কোনও জায়গায় দেখাতে হবে, যে আমি বাণিজ্যিক কোনো স্থাপনা করতে বা কোনও প্রজেক্ট করছি। তাছাড়া আপনি আলাদা হতে পারেন, আপনার যদি ছেলেমেয়ে থেকে থাকে তাঁরা আলাদা হয়ে গেছে,  একই খানা হওয়া যাবে না, বাড়ি আলাদা হতে হবে। 


পরিত্যক্ত কোন জমি দখল নিয়ে থকলে জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হবে


(৬) পরিত্যক্ত জমি দখল নিয়ে থাকেন এবং সেটা বিক্রি করে থাকেন। পরিত্যক্ত জমি কি? আপনারা যদি সরকারি বা বেসরকারি কোনও জমি দখল করে বিক্রি করে থাকেন, বা আপনি কিনে থাকেন, সেটা আপনার কাছ থেকে হাতছাড়া হয়ে যাবে। সরকারের অনেক পরিত্যক্ত জমি থাকে, বিভিন্ন ডোবানালা, রাস্তাঘাটে,  আশপাশে তো অনেক পরিত্যক্ত জমি আছে, অনেকে  মারা গেছে, অনেকের কোন ওয়ারিশ নাই, এগুলো সবি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। যদিও আপনার প্রতিবেশী কিন্তু আপনার কোনো সুযোগ নেই, আপনি যদি রক্তের সম্পর্ক না হন। আপনি কোনও ভাবেই সম্পত্তি পাবেন না৷ অনেক লোক দেশত্যাগ করেছে, অনেক লোক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে গেছে, অনেক পরিত্যক্ত জমি আছে আপনি হয়তো জানেন না। এর মধ্যে কেউ সেটা তাঁর নামে রেকর্ড করে নিয়ে, সেটা দেখা যায় বেচাকেনা করছে। আপনার কাছে দিচ্ছে, আশেপাশে দিচ্ছে, এগুলো কিন্তু নেওয়া যাবে না। সাবধান আপনারা জমি কেনার সময় কিন্তু খেয়াল করে না। ২৫ বছরের মালিকানা দেখেন আর বেশি পিছনের দিকে আপনার খোঁজখবর করেন না। জমি কেনার সময় ফ্ল্যাট কেনার সময় অবশ্যই অবশ্যই ওই ফ্ল্যাট একশ তোলা হোক না কেন, ভালো ভাবে কাগজপত্র দেখে নিবেন। যদি প্রকৃত কাগজপত্র দেখাতে না পারে তাহলে জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হবে। 


 সিকস্তি জমি কেনাবেচা করা যাবেনা


(৭) সিকস্তি জমি কেনাবেচা করা যাবেনা। সিকস্তি জমি কি? অর্থাৎ যে জমি গুলো  নদীর উপকূলে আছে, সেগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত  আস্ত আছে ততক্ষণ পর্যন্তই মালিকের। যখন নদীতে ভেঙে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে জমির মালিকানাটি সরকার  হয়ে যাবে, এবং পরবর্তীতে যখন ওই জমি টি চরে পরিবর্তন হবে, তখন ঐ জমির মালিক আপনি না, এবং আপনি কেনা বেচা করতেও পারেন না। কেননা ঐ জমি খাস হয়ে গেছে। তবে  হ্যাঁ ডিসি সাহেবের বরাবর আবেদন করে আপনি ঐ জমি খাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এধরনের জমি কেনা বেচা করা যাবে না।


পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url