প্রেগন্যান্ট অবস্তায় প্রথম তিন মাস যে সমস্যা গুলো হয়
প্রেগন্যান্ট অবস্তায় প্রথম তিন মাস যে সমস্যা গুলো হয়।
আসসালামু আলাইকুম আমি ডাক্তার কাজি ফয়েজা মীম গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন আজ আপনাদেরকে বলবো গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কোন সমস্যাগুলো বা কোন উপসর্গগুলো একদমই স্বাভাবিক।
একটা মা যখন প্রেগন্যান্ট হয় অর্থাৎ প্রেগন্যান্ট যখন পজেটিভ পায় তখনই কিন্তু আমাদের কাছে আসে। এবং প্রথম তিন মাসে কিছু সমস্যা নিয়ে আসে। এই সমস্যাগুলো যেহেতু তার জীবনে প্রথমবার ফেস করছে তো অনেকেই তাতে ভয় পেয়ে যায়। তখন সেই প্রব্লেম গুলো কি তার জন্য স্বাভাবিক কিনা সে বুঝতে পারে না।
এজন্য আমাদের জানতে হবে প্রথম তিন মাসে কোন সমস্যাগুলো সবারই হয় এবং কোন সমস্যাগুলো একদমই স্বাভাবিক।
প্রেগন্যান্ট অবস্তায় প্রথম তিন মাস যে সমস্যা গুলো হয়।
১. প্রথম তিন মাসে প্রথম অবস্তায় বমি বমি ভাব লাগাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক৷ কারও কারও বমি বমি ভাব লাগে, কেউ কেউ আবার বমিও করে। এই ভয় টা দিনে যে কোনও সময় হতে পারে। এটাকে আমরা মর্নিং সিকনেস বলে থাকি। সাধারণত সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই প্রচণ্ড একটা বমি ভাব হয় তো বমিভাব হওয়াটা প্রথম তিন মাসে একদমই স্বাভাবিক। যেহেতু মা প্রথমবার একটা প্রেগন্যান্সি হরমোনের এক্সপোজ হচ্ছে, সেহেতু এই বমি ভাবটা তার হতেই পারে। এই বমিভাব তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
গর্ভাবস্থায় বমিভাব কমানোর জন্য কি প্রয়োজন?
অনেকেই আছেন এই বমিভাব কমানোর জন্য পেট খালি রাখে যাতে বমি না হয়। এমনটা কখনো করা যাবে না পেটটা খালি রাখা যাবে না। তার মানে কি? তার মানে তাঁকে প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে কিছু না কিছু খাবার খেতে হবে, সেটা অল্প করে খেতে হবে একবারে ফুল স্টমাক।পুরো পেট ভরে খাবে না এবং বার বার খাবে। অর্থাৎ প্রতি দুই থেকে ৩ ঘণ্টা পরপরই সে কিছু না কিছু খাবে। তাহলে তাঁর এই বমি ভাবটা অনেকাংশেই কম হবে৷
গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া
২. সমস্যা যেটা নিয়ে পেশেন্ট আমাদের কাছে আসে, সেটা হচ্ছে অ্যাসিডিটি বা বুক জ্বালাপোড়া। অনেকে হয়তো আগে থেকে অ্যাসিড এর প্রব্লেম ছিলো সেটা প্রেগন্যান্সিতে বেড়ে যায়। অথবা অনেকের কখনই প্রবলেম ছিল না তাঁর প্রেগনেন্সিতে এসে হঠাৎ করে বুক জ্বালাপোড়া অ্যাসিডিটি প্রবলেম দেখা দেয়। এমন অবস্তায় সে যে খাবার গুলো অল্প অল্প খাবারের পাশাপাশি খেয়ে থাকে সেই খাবারগুলো পরিহার করতে হবে করতে হবে। যেমন অতিরিক্ত মশলাদার খাবার, অতিরিক্ত ঝাল খাবার, ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার। এই ধরনের খাবার, যেগুলো অ্যাসিডিটি বাড়ায়, এই খাবারগুলো তাঁকে সম্পূর্ণভাবে অ্যাভয়েড করতে হবে।
৩. নম্বর সমস্যা নিয়ে মায়েরা আমাদের কাছে আসে। প্রথম তিন মাসে তা হল কনস্টিপেশন বা টয়লেট টা ক্লিয়ার করে হচ্ছে না। কারও কারও দুদিন তিনদিন চারদিন টয়লেট হয় না তো টয়লেট ক্লিয়ার করে হতে হলে। তাঁকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে এবং আঁশযুক্ত খাবার তাঁকে বেশি খেতে হবে। যেমন ফলের রস সে বেশি পরিমাণে খেতে পারে। এতেও তাঁর কিন্তু টনিক এর প্রব্লেম টা থাকবে না এবং এটা অবশ্যই প্রতিদিন হতে হবে এবং ক্লিয়ার করে হতে হবে। দুদিন তিনদিন চারদিন টয়লেট হবে না। এভাবে থাকা যাবে না।
গর্ভাবস্থায় বার বার প্রস্রাব হওয়া
৪. নম্বর প্রব্লেম যেটা দিয়ে পেশেন্ট আমাদের কাছে আসে, সেটা হচ্ছে বারে বারে প্রস্রাব হওয়া কোন কোন পেশেন্ট বলে আমার দিনের মধ্যে অনেকবার প্রস্রাব হয়। কেউ বলে যে আমি প্রস্রাব করে আসার পর মনে হয় যে প্রস্রাবটা আবার হবে। কেউ বলে রাতে ঘুমের মধ্যে উঠে বার,বার, প্রস্রাব করতে হয় যার জন্য ভালো ঘুম হয় না। তো অনেকেই ভাবে আমার প্রস্রাবে ইনফেকশন হল কি না। আসলে তা না। প্রথম তিন মাসে এরকম ফ্রিকোয়েন্সি এটা একটা কমন সিম্পটম এবং এটা প্রেগন্যান্সির কারণে হয়ে থাকে।
তিন মাস চলে গেলে এ সমস্যাটা নিজেই চলে যাবে তো এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটার জন্য কোনও ওষুধও লাগবে না।
গর্ভাবস্থায় ব্রেস্টে ব্যাথা
৫. নাম্বার সমস্যা টা হচ্ছে ব্রেস্টে ব্যথা।
এটার জন্য তাঁকে বুঝতে হবে যে প্রেগন্যান্সি হরমোনের কারণে ব্রেস্টে কিছু চেঞ্জ আসে এবং যেহেতু সে প্রথমবার মা হচ্ছে সেই জিনিসটা ফীল করে যে একটা ব্যথা হয় বা ব্রেস্ট একটু হাত লাগলে বা টাচ খেলে বা কাপড় লাগলে একটা ব্যথা ফিল হয় তো এটার সমাধান হচ্ছে তাঁকে কাউন্সেলিং করা যেটা প্রেগন্যান্সি চেঞ্জের জন্য হচ্ছে, সেটার জন্য আসলে খুব বেশি মেডিকেশন বা কোনও কিছু প্রয়োজন নাই।
এটা তিন মাস চলে গেলে তখন আর ফিলিংসটা থাকবে না।
গর্ভাবস্থায় দুর্বলতা
এর পরবর্তীতে একটা প্রবলেম নিয়ে পেশেন্ট আমাদের কাছে আসে। সেটা হচ্ছে প্রচন্ড দুর্বলতা। অনেকে বলে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছি না।
. আমি কোন কাজ করতে পারছি না।
. আমার সারাক্ষণ ঘুম পায়।
আমার মনে হয় শুয়ে থাকি তো এটা সমাধানটা হচ্ছে তাঁকে যতটুকু সম্ভব রেস্টে থাকতে হবে। এবং প্রচুর পরিমাণে পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। এর পরবর্তীতে যেটা সেটা হচ্ছে খাবারে অরুচি। অনেকে বলে যে আমার মাছ মাংসের গন্ধ একদম সহ্য হয় না। অনেকে বলে যে রান্না করা খাবারের গন্ধ শুনলে আমার বমি আসে। অনেকে বলে যে আমার খাবারটা একদম গলার মধ্যে আটকে থাকে। এখান থেকে কোনওভাবেই সরে না তো এগুলো আসলে প্রেগন্যান্সি প্রেগন্যান্সি হরমোনের কারণে এই খাবারে অরুচি গুলো আসে। এবং এগুলো তিন মাস পরে চলে যাবে।
প্রথম তিন মাসে কারও কারও ক্ষেত্রে খেতে না পেরে ওজন ১০/১২ কেজি কমে যায়। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ সময় আসলে সব খাবার খেতে হবে এমন কোনও কথা নেই যার যেটা ভালো লাগে সেটাই খাবে।বারে বারে খাবে এবং অল্প অল্প করে খাবে।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় জ্বর জ্বর ভাব
এর পরে যে প্রব্লেম সেটা হলো জ্বর। অনেকে বলে যে আমার প্রতিদিন রাতে জ্বর আসে এবং আমার শরীর গরম হয়ে যায়। এই ধরনের সমস্যা প্রেগন্যান্সি হরমোনের জন্য হয় । আমাদের শরীরের টেম্পারেচারটা কি পয়েন্ট ফাইভ ডিগ্রী অর্থাৎ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এটা জ্বর না। আমরা যখন থার্মোমিটার দিয়ে মাপি তখন দেখব যেটা একশ ডিগ্রি বা 100 ক্রস করে না তাহলে বুঝতে হবে এটা জ্বর না। এবং তার জন্য ট্রিটমেন্ট এর দরকার নেই।
প্রথম প্রথম যেহেতু সে মা, হচ্ছে বা প্রথম যে প্রেগন্যান্সি সেটা আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে তিন মাস পরে কিন্তু আর এই জ্বর জ্বর ভাব থাকবে না। আর এই জ্বরের জন্য কোন ওষুধ খেতে হবে না।
তাহলে প্রথম তিন মাসে কোনগুলো আমাদের স্বাভাবিক সমস্যা। এটা যদি আমরা জানতে পারি তাহলে অনেক ধরনের ওষুধ নেওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারব।
প্রথম তিন মাস চলে গেলেই আস্তে আস্তে এই সমস্যাগুলো সাথে প্রত্যেকটা মাই অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এবং যখন আমাদের কাছে তিন মাস পরে চেকআপে আসে তখন বলে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি একদম ফিট আছি তো সবাইকে এতটুকুই অনুরোধ থাকবে আপনারা জানবেন।
এই প্রথম তিনমাসের এই সমস্যা গুলো আমাদের আসলে এমন কোনও মেজর সমস্যা না। সব মায়েদের হয়। তিন মাস চলে গেলে ইনশাল্লাহ সবাই আবার আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে। ধন্যবাদ সবাইকে।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url